Director: Joe Wright
সে অনেক বছর আগের কথা। একদা ইংল্যান্ডে একজন মহিলা ঔপন্যাসিক ছিলেন। যিনি লিখেছিলেন ইতিহাসের অন্যতম বিখ্যাত এক প্রেমের উপন্যাস৷ প্রায় ২০০ বছর পর তার লেখা সেই উপন্যাস অবলম্বনে একই নামে সিনেমা তৈরি করেন ডিরেক্টর জো রাইট (Joe Wright)। উপন্যাসটি প্রকাশ হয়েছিল ১৮১৩ সালে এবং সিনেমাটি মুক্তি পায় ২০০৫ সালে। সেই ঔপন্যাসিকের নাম জেন অস্টেন (Jane Austen) এবং তার সেই অতি বিখ্যাত উপন্যাসটির নাম ‘Pride and Prejudice’।
উপন্যাস “Pride and Prejudice”- এর এক অসাধারন সিনেম্যাটিক রূপ হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে জো রাইটের ‘Pride and prejudice’ সিনেমা।
‘Pride and Prejudice’- এর মূল থিম মূলত উনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকের ইংল্যান্ডের জটিল সামাজিক পরিবেশে রোমান্টিসিজমের উত্তেজনা, যা জো রাইট দক্ষতার সঙ্গে তার সিনেমায় জীবন্ত করে তুলেছে।
উপন্যাসের দুই কেন্দ্রীয় চরিত্র এলিজাবেথ বেনেট ও মিস্টার ডারসি।
কিরা নাইটলি পোট্রে করেছেন এলিজাবেথ বেনেট এবং ম্যাথিউ ম্যাকফ্যাডিয়েন করেছেন মিস্টার ডারসি।
কিরা নাইটলির এলিজাবেথ বেনেটের চরিত্রচিত্রণ অত্যন্ত প্রাণবন্ত ও আকর্ষণীয়। নাইটলি এলিজাবেথ চরিত্রটির বুদ্ধিমত্তা, রসিকতা এবং স্বাধীনতার গুণাবলিকে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। এলিজাবেথ চরিত্রে নাইটলির অভিনয় ছিলো খুবই সূক্ষ্ম, যা একইসাথে এলিজাবেথের অন্তর্নিহিত শক্তি ও দুর্বলতাকে প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছে। অন্যদিকে, ম্যাথিউ ম্যাকফ্যাডিয়েনের মিস্টার ডারসির চরিত্রটি শুরুর দিকে ছিলো অত্যন্ত নির্লিপ্ত ও রহস্যময়, ধীরে ধীরে তার গভীর আবেগ ও সংবেদনশীলতা প্রকাশ হতে শুরু করে। একজন ঔদ্ধত্যপূর্ণ অভিজাত ইংরেজ থেকে অন্তর্নিহিত গভীর ভালোবাসা এবং নম্রতাসম্পন্ন মানুষের যে পরিবর্তন, ম্যাকফ্যাডিয়েন তা অত্যন্ত দক্ষতা ও সুনিপুণভাবে পোট্রে করে।
সিনেমার ভিজ্যুয়ালিটি অনন্য। রোমান ওসিনের সিনেমাটোগ্রাফি ইংল্যান্ডের গ্রামীণ সৌন্দর্যকে চমৎকারভাবে উপস্থাপন করে—গড়ানো পাহাড়, কুয়াশাচ্ছন্ন সকাল এবং বিশাল প্রাসাদের চিত্রায়ণ আপনাকে নিয়ে যাবে উনবিংশ শতাব্দীর ইংল্যান্ডের কোন এক গ্রামীন জীবনে। এই অসাধারণ ভিজ্যুয়ালের সাথে রিজেন্সি যুগের নিখুঁত পরিবেশের সংযোজন একে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে। বিশেষত, বল নাচের দৃশ্যগুলো, যা সেই সময়ের সামাজিক পরিবেশের শৈল্পিকতা এবং শৃঙ্খলাকে অত্যন্ত সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলে।
সিনেমাটির অন্যতম শক্তিশালী দিক হলো তা অস্টেনের দীর্ঘ উপন্যাসটিকে একটি সংক্ষিপ্ত এবং আকর্ষণীয় বর্ণনায় রূপান্তর করতে সক্ষম হয়েছে। স্ক্রিনরাইটার ডেবোরাহ মোগাচ দক্ষতার সঙ্গে উপন্যাসের জটিল সব কাহিনি এবং অসংখ্য সব চরিত্র পরিচালনা করেছেন, প্রধান বিষয়বস্তু এবং গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্যগুলি অত্যন্ত সুন্দরভাবে সিনেমায় এড করা হয়েছে। সংলাপগুলো ছিলো তীক্ষ্ণ এবং অস্টেনের উপন্যাসের প্রতি বিশ্বস্ত, তবে আধুনিক দর্শকদের জন্য সহজবোধ্য।
সিনেমার অন্যান্য অভিনেতারাও ছিলেন অসাধারণ। বিয়েষ করে মিস্টার বেনেট চরিত্রের ক্লান্ত কিন্তু স্নেহময় পিতার চরিত্রটিকে অসাধারণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেম ডোনাল্ড সাদারল্যান্ড। ব্রেন্ডা ব্লেথিনের মিসেস বেনেট অত্যন্ত প্রাণবন্ত এবং কর্তৃত্বপরায়ণ এক চরিত্র, যা তার কন্যাদের বিয়ে দেওয়ার উদ্বিগ্নতাকে সুন্দরভাবে তুলে ধরেছে। রোজামুন্ড পাইক, জেনা মালোন, তালুলা রাইলি এবং ক্যারি মুলিগানের বেনেট বোনেরা প্রত্যেকে স্বতন্ত্র এবং স্মরণীয় অভিনয় উপস্থাপন করেছেন, যা বেনেট পরিবারের ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তিত্বকে ফুটিয়ে তুলেছে।
সিনেমাটির আরেকটি বিশেষ দিক হলো দারিও মারিয়ানেলির সুরেলা ও আবেগঘন ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর। সিনেমার ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক অসাধারন সব দৃশ্যগুলোর আবেগীয় গভীরতাকে বাড়িয়ে তোলে—এলিজাবেথের নিরিবিলি আত্ম-অনুসন্ধান থেকে শুরু করে তার এবং মিস্টার ডারসির মধ্যকার আবেগময় রোমান্টিক মুহূর্ত পর্যন্ত। পিয়ানোর ব্যবহার সিনেমাটির নান্দনিকতাকে আরও নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তোলে।
অনেকে দাবি করে অস্টেনের উপন্যাস থেকে সিনেমার কিছুটা বিচ্যুতি হয়েছে ( আধুনিক সংলাপ এবং বেশি প্রকাশ্য রোমান্টিক অঙ্গভঙ্গি) কিন্তু সত্যিকার অর্থে এই পরিবর্তনগুলোই গল্পটিকে বৃহত্তর দর্শকদের কাছে আরও সহজলভ্য করে তুলেছে। সিনেমাটি সামাজিক শ্রেণি নিয়ে অস্টেনের সমালোচনার মূল ভাব এবং ব্যক্তিগত সততার গুরুত্বকে ধারণ করেছে, একইসঙ্গে গভীর আবেগপূর্ণ এবং মনোমুগ্ধকর রোমান্টিক নাটক উপস্থাপন করেছে।
সারসংক্ষেপ: জো রাইটের “Pride and Prejudice” একটি সফল সংস্করণ এবং একটি স্বতন্ত্র সিনেমা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।উপন্যাসের মূল উপাদানের প্রতি বিশ্বস্ততা এবং আধুনিক দর্শকদের চাহিদার মধ্যে একটি সফল ভারসাম্য বজায় রেখেছে। নাইটলি এবং ম্যাকফ্যাডিয়েনের শক্তিশালী অভিনয়, মনোমুগ্ধকর সিনেমাটোগ্রাফি এবং অসাধারন ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক-সব মিলিয়ে সিনেমাপ্রেমীদের কাছে জো রাইটের ‘Pride and Prejudice’ একটি আকর্ষণীয় ও স্মরণীয় অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে। আপনি যদি জেন অস্টেনের লেখার ভক্ত হয়ে থাকেন, নিঃসন্দেহে, জো রাইটের এই সংস্করণ আপনার মনে গভীর ছাপ ফেলবে।